সরেজমিনে, জেলার একাধিক ইউনিয়ন পরিষদ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় এটুআই প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে ই-তথ্য কেন্দ্র চালু রয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে সরকার থেকে কম্পিউটারসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি দেয়া হয়েছে। সেখানে বিদ্যুৎ নেই সেখানে রয়েছে ক্ষমতা সম্পূর্ণ সোলার প্যানেল। কিন্তু ইন্টারনেট সংযোগ না পৌঁছায় জনগণ কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না। উপজেলা সদরের আশপাশের ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে মডেমের (অপারেটর) মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করা হলেও ধীরগতির কারণে নির্দিষ্ট সময়ে গ্রাহকদের সেবা দেয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।
৩নং ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা প্রসেনজিৎ ত্রিপুরা জানান, ২০১০ সালে এটুআই প্রকল্পের আওতায় এ ইউনিয়নে ই-সেবা কার্যক্রম চালু করা হয়। কিন্তু ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট না থাকায় ২ মিনিটের একটি কাজ করতে কোন কোন সময় একদিন চলে যায়। সাথে আছে বিদ্যুতের লো-ভোল্টেজ ও চরম লোডশেডিং। এতে করে সেবাগ্রহীতাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে পারছি না।
সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে কয়েকজন জানান, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সেবা পাওয়ার কথা টেলিভিশন ও পত্র-পত্রিকায় দেখলেও আমরা পাচ্ছি না। জন্মনিবন্ধন সংশোধনী করতে এসে ভোগান্তিতে পড়া মিলন চাকমা নামে এক যুবক জানান, পাসপোর্ট করার জন্য জরুরিভাবে জন্মনিবন্ধন সংশোধন করা প্রয়োজন। তিনদিন ধরে ইন্টারনেটের গতি না থাকায় সংশোধনী করতে পারছি না। ইউনিয়ন পরিষদ ই-সেবা কেন্দ্রগুলোতে জন্ম নিবন্ধন, মৃত্যু সনদ, ওয়ারিশন সনদসহ প্রায় ১২ ধরনের সেবা দেয়া হলেও খাগড়াছড়ির বেশিরভাগ ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে বিদ্যুৎসংযোগ ও ইন্টারনেট না থাকায় প্রান্তিক জনগণ ই-সেবা বঞ্চিত হচ্ছে।
বিটিসিএল’র তথ্য মতে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যাললের-এটুআই প্রজেক্টের আওতায় চট্টগ্রামের হাটহাজারি থেকে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে অপটিক্যাল ফাইবারের স্থাপনের কাজ শুরু হয়। রাঙামাটির কাজ শেষ হলেও অজানা কারণে বন্ধ হয়ে যায় খাগড়াছড়ি অংশের কাজ। হাটহাজারি থেকে ৬৭ কি.মি. দূরত্বে রেডিও লিংকের মাধ্যমে খাগড়াছড়ি জেলার আলুটিলার বিটিসিএল টাওয়ারে ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া হয়। যেটি দিয়ে খাগড়াছড়ি জেলার ইন্টারনেট সেবা চলছে। এতে করে খাগড়াছড়িবাসী কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না।
এ বিষয়ে বিটিসিএল’র খাগড়াছড়ি জেলার ইনচার্জ (সহকারী প্রকৌশলী) ওমর খান বলেন, মোবাইল নেট আসার পরে খাগড়াছড়িতে বিটিসিএল গ্রাহক হারাচ্ছে। যদি অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবলের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা দেয়া গেলে গ্রাহক ধরে রাখা যেত। খাগড়াছড়ি শহর থেকে বিভিন্ন উপজেলায় অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল স্থাপনের কাজ শেষ হলেও হাটহাজারি থেকে আলুটিলা পর্যন্ত ৬৭ কি. মি. কাজ অসমাপ্ত থাকায় জেলায় ব্রডব্যান্ড সার্ভিস চালু করা যাচ্ছে না। এটি হয়ে গেলে জেলায় কাঙ্ক্ষিত ইন্টারনেট সেবা দেয়া সম্ভব হবে।
জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ব্যক্তিগতভাবে বিটিসিএল’র চট্টগ্রাম অঞ্চলের অনেক কর্মকর্তাকে অসমাপ্তি ৬৭ কি. মি. কাজের ব্যাপারে যোগাযোগ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়েও একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়েছে। ইন্টারনেটের অভাবে দাপ্তরিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে। কার্যক্রম চালাতে না পারায় ইউনিয়ন তথ্যকেন্দ্রের বিভিন্ন মূল্যবান সরঞ্জামাদিও বিকল হয়ে পড়ছে। আশা করছি সংশ্লিষ্টরা দ্রুত এ সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নিবেন।
Leave a Reply