মঙ্গলবার, ২৮ Jun ২০২২, ১২:৫৮ অপরাহ্ন
নুরুল আলম:: পার্বত্য অঞ্চলের তিনটি জেলা খাগড়াছড়ি রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানে ভারী বর্ষণের কারণে ধীরে ধীরে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে পাহাড়ের পাদদেশ। এর ফলে যেকোন মুহূর্তে পাহাড় ধসে ঘটতে পারে ব্যাপক প্রাণহানি। আর এসব কারনে আতঙ্কে দিনরাত পার করছেন পাদদেশে বসবাসকারীরা।
বান্দরবান প্রায় প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধসে বসতবাড়িতে পড়ে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে থাকে। প্রশাসন তাদের রক্ষার্থে প্রতিবছর নানান উদ্যোগ নিলেও পাহাড়ের পাদদেশ থেকে বসবাসকারী এসব পরিবারকে সরিয়ে নেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। বান্দরবান শহরের ইসলামপুর, লাঙ্গিপাড়া, হাফেজ ঘোনা , কালাঘাটা, বনরূপা, ক্যাচিং ঘাটাসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার কয়েক হাজার পরিবার ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে পাহাড়ের পাদদেশে।
স্থানীয়দের মতে, প্রতি বছরই শুকনা মৌসুমে পাহাড় কেটে তার পাদদেশে নতুন নতুন বসত বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। পাহাড়ি জমির মূল্যে সমতল জমির তুলনায় কম হওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষরাই পাহাড় কেটে সেখানে বসত নির্মাণ করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাদদেশে বসবাস করে। আর বর্ষা মৌসুমে এসব এলাকায় পাহাড় ধসে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে। ফলে মৃত্যু বরণকারীরা বেশির ভাগই হয় নিম্ন আয়ের মানুষ।
তারা আরও জানান, বান্দরবান সদর ছাড়াও জেলার দক্ষিণাঞ্চল লামা, আজিজনগর, ফাসিয়াখালী, ফাইতং, গজালিয়া, রোয়াংছড়ি, নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমসসহ বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ের পাঁদদেশে নতুন নতুন বসতি গড়ে উঠেছে। আর মাথাগোঁজার ঠাঁই হিসেবে সেখানে অপরিকল্পিত ভাবে বসতবাড়ি গড়ে তুলেছে হাজার হাজার পরিবার। ফলে সেখানে পাহাড় ধসের ঝুঁকি ও মৃত্যুর সম্ভাবনা আগের তুলনায় বেড়ে গেছে।
এদিকে, পাদদেশে বসবাসকারীদের মতে, বেঁচে থাকার তাগিদে কয়েকবছর যাবৎ ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাহাড়ের পাঁদদেশে বসবাস করছেন তারা। সরকার প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি শুরু হলেই মাইকিং করে আশ্রয়কেন্দ্রে সরে যেতে আহবান করা হয়। তাদেরকে পরবর্তীতে পূর্ণবাসনের আশ্বাসও দেয়া হয় সেসময়। কিন্তু এগুলো মুখে কিংবা কাগজ কলমেই থেকে যায়, বাস্তবে কিছুই হয়না।
বান্দরবান বাসস্টেশন এলাকার কাসেম পাড়ায় পাদদেশে বসবাসকারী মো. ইব্রাহিম জানায়, আমার বাড়িটি পাহাড়ের উপরে। যারা নিচে থাকে তারা প্রভাব দেখিয়ে পাহাড়ের মাটি কেটে ফেলায় আমার বাড়িটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। যেকোন মুহূর্তে আমার বাড়িটি ধসে পড়তে পারে। সে এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে সরকারি সহায়তা চেয়েছেন।
এদিকে কালাঘাটার পাহাড় ঝুঁকিতে থাকা মনোয়ারা বলেন, সরকার আমাদের নিরাপদে থাকার জন্য আশ্রয়ের ব্যবস্থা করলে আমরা ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের পাদদেশে থাকতাম না। বর্তমানে আমরা অনেকটা বাধ্য হয়েই এখানে ঝুকি নিয়ে বসবাস করছি।
সরকারি সূত্র মতে, ২০০৬ সালে জেলা সদরে ৩ জন, ২০০৯ সালে লামা উপজেলায় শিশুসহ ১০ জন, ২০১০ সালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ৫ জন, ২০১১ সালে রোয়াংছড়ি উপজেলায় ২ জন, ২০১২ সালে লামা উপজেলায় ২৮ জন ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ১০ জন, ২০১৫ সালে লামায় ৪ জন, সিদ্দিকনগরে ১ জন ও সদরের বনরূপা পাড়ায় ২ জন, ২০১৭ সালের ১৩ জুন সদরের কালাঘাটায় ৭ জন ও রুমা সড়কে ২৩ জুলাই ৫ জন পাহাড় ধসে নিহত হন।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩ জুলাই কালাঘাটায় ১জন ও লামায় ৩ জন, ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই লামাতে ১ জন, ২০২০ সালের ১সেপ্টেম্বর আলীকদমের মিরিঞ্জা এলাকায় ১ জন ও ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর সাইঙ্গ্যা ঝিরিতে বান্দরবানে একই পরিবারের ৩ জন নিহত হয়।
শীঘ্রই পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের অন্যত্র সরিয়ে না নিলে পাহাড় ধসে আবারো বড় ধরনের প্রাণহানির মত দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা আইনত দন্ডণীয় অপরাধ।
Leave a Reply