সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৪:৫২ অপরাহ্ন
নুরুল আলম/আল-মামুন: নতুন স্থানে ভিন্ন কিছু নতুন অভিজ্ঞতা হবে এটাই বাস্তবতা। খাগড়াছড়িতে দীর্ঘ ৩৯ বছর যাবৎ আমার বাবা সাংবাদিক নুরুল আলম তার নিষ্ঠা এবং সততার সাথে অন্যায় অত্যারিত মানুষের পক্ষে লিখে গেছেন। বাবার চিকিৎসা নিতে চেন্নাই এসে হয়েছে এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। জানার শেষ নেই। পৃথিবীটা অনেক বড়। বিধাতার সৃষ্টি,নির্দশন আর ভিন্ন ভিন্ন রীতি নিতি,নিয়ম,চলাচল নতুন কিছু শেখায় মানুষকে।
আসি বাস্তবতায়। ২৭ জুলাই ২০২৩ বৃহস্পতিবার ১০টায় গুইমারা থেকে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি প্রাইভেট নোহাতে। চট্টগ্রাম আমানত শাহ এর মাজার এর পাশ থেকে শ্যামলী বাসে করে কোলকাতার পথে বাবা-ছেলে যাত্রা শুরু করি। ২৮ জুলাই বেনাপোলে পৌঁছাই সকাল সাড়ে ৫ টায়। শুরু হয় বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন পালা। সকাল ১০টার মধ্য ভারতীয় ইমিগ্রেশন শেষ করে কোলকাতায় পৌঁছাই বিকেলে।
সেখান থেকে হোটেলে রাত যাপনের পরদিন ২৯ জুলাই হোটেল থেকে ট্যাস্কিতে কোলকাতা দমদম এয়ারপার্টে। সকল চেকিং শেষে ১টা ৫৫ মিনিটে বিমানের নির্ধারিত দুপুর ২ টা ৪০ মিনিটে ইন্ডিগো বিমান প্লাইট উড্ডয়ন করলেও তা আবার জরুরী অবতরণ করে সে বিমান বন্দরে। পরে ভারতীয় সময় বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে আবারো প্লাইট ছাড়ে কোলকাতা থেকে চেন্নাই এর উদ্দেশ্যে।
ভারতীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় চেন্নাই এয়ারপোর্টে অবতরণ করে বিমান ইন্ডিগো। ৮ টা ১০ মিনিটে চেন্নাই থেকে ভেলোরের সিএমসির উদ্দেশ্যে গাড়িতে রওনা করে ২৯ জুলাই রাত ১২টার পর পৌঁছোলাম।
রাতেই জয়শ্রী গেষ্ট হাউজে রুম নিয়ে রাত যাপন, তার সকাল হতেই পানি,গ্যাস এর ব্যবস্থা করে বাজারে করে রান্না করে দুপুরের খাবার খেলাম। রবিবার থাকায় চেন্নাই এ বন্ধের দিন পরায় চিকিৎসা কার্যক্রম না থাকায় বাবা-ছেলে একটা ঘুম দিলাম। পরদিন সোমবার সিএমসির নতুন অভিজ্ঞতা।
সকাল সাড়ে ৬টায় হোটেল থেকে রওনা করে মুল গেইট থেকে ৯০০ নাম্বার রুমে রেজি:। তার পর দুই তলায় সি ফরমসহ ডাক্তার দেখাতে বাস যোগে নিয়ে এলো সিএমসির রানীপেত হসপিটালের শাখায় চলে আসি বাবাকে নিয়ে। ডাক্তার দেখাতে লম্বা লাইন আর রোগির জন্য একটি কার্ড করতে হয়। যেখানে সকল পরীক্ষার রিপোর্ট জমা হয়ে যায়। ডাক্তার দেখানের পর প্রথম দিন সোমবার সকালে ও রাত ১২টায় এসে আরেকটি পরীক্ষা করিয়ে হোটেলে ফিরেছি রাত প্রায় ৪টায়। পরদিন মঙ্গলবার সিএমসির মুল ভবনে আরো দুটো ও রাণীপেতে আরেক পরীক্ষা শেষ হয় দুপুর নাগাদ।
পরদিন বুধবার সকালে আবারো রাণীপেত হসপিটালে ডাক্তারের এপোয়েন্ট মেন। সকল কাগজপত্র ও রোগির কার্ড নিয়ে সে সিরিল দিতে হলো। আজ নির্ধারণ হবে বাবার সঠিক কি রোগ ও অবস্থার। তারপরও আমি খুশি, বাবার ইচ্ছে ছিলো যেন ভারত নিয়ে আসি। এর পর থেকে ধারাবাহিক ভাবে পরীক্ষা-নিরিক্ষা,ডাক্তার দেখানোর পর ১মাস ৪ দিনের মাথায় ডাক্তার ক্যান্সারের কেমো,সিভাইরাসের জন্য সব ঔষধ তিন মাসের জন্য দিয়ে আবারো নিতে পরামর্শ দেয় ডাক্তার। বাকি আল্লাহর ইচ্ছা।
আল্লাহ সহায় থাকায় প্রধানমন্ত্রীর সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট দেড় লক্ষ টাকা ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপুর আন্তরিকতায় ১ লক্ষ টাকা ও গুইমারা রিজিয়নসহ সিন্দুকছড়ি জোন, যামীনিপাড়া বিজিবি, পলাশপুর বিজিবি, মাটিরাঙ্গা জোন, রামগড় বিজিবি, গুইমারা বিজিবি সেক্টর ও লক্ষ্মিছড়ি সেনাবাহিনী থেকে দিয়েছে আর্থিক সহায়তা যার কারনেই র্দীঘ ৬মাস বাংলাদেশে চিকিৎসার পর ভারতে আনা সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাব , খাগড়াছড়ি সাংবাদিক ইউনিয়ন ও গুইমারা প্রেসক্লাব থেকে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছিল। যারা বিপদে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে তাদের প্রতি রইল আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। আশা করছি আগামীতের সার্বিক সহযোগিতা ও চিকিৎসার খোজ খবর নেওয়া অব্যহত থাকবে।
তবে রাস্তায় নির্ধারিত বিভিন্ন ভাড়া আর টাকা খরচের চেয়ে বেশি ছিলো ইমিগ্রেশন ভোগান্তিটা। ছিলো অনেক নতুন অভিজ্ঞতা আর বিভিন্ন স্থানে কিছুটা ঠকবাজদের আদর করে কৌশলে ধানাবাজির উপদ্রব। তবে আমার বাংলাদেশের মত সুন্দর ও উন্নত সমৃদ্ধ শালী দেশের তালিকার কাছে কোলকাতাকে আমি গ্রামের মতই দেখলাম। যা চোখে পড়ার মত ছিলো।
তবে বাবার বিমানে চড়ার অভিজ্ঞতা থাকলে আমি বিমানে নতুন হওয়ায় নানা প্রশ্ন,কৌতুহল কাজ করছিলো। নতুন পাখির চোখে পৃথিবী দেখা আর বিমানে মেঘ-আকাশে ভেঁসে বেড়ানোটা বেশ ছিলো। মেঘঁগুলো বিমানে পাঁশে আর আমি বিমানে অন্য রকম এক অভিজ্ঞতা।
চিকিৎসা শেষে ৩ মাসের ঔষধ নিয়ে ফেরার সময় চেন্নাই থেকে বিমান বন্দর থেকে ইউএস বাংলার ১টা ৫৫ মিনিটের প্লাইটে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের ঢাকা বিমান ৫টা ১০ মিনিটে প্রশান্তিতে প্রাণভরা নিশ্বাস নিলাম নিজ দেশে।
চেন্নাই এর পথে পরিচয় ও ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে অনেক বাংলাদেশীর সাথে তাদের মধ্যে রাঙ্গুনিয়ার বাসিন্দা সুধীর দাশ অন্যতম। এছাড়াও নিজেদের সাথে যাওয়ার পথে পরিচয় হওয়া সঙ্গিদের মধ্যে ভোলা আব্দুল্লাপুর, চরফ্যাশনের ওমর ফারুক (৫২) ও রোগি ওনার ছেলে ফরহাদ (২৩), চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি উপজেলার বাগান বাড়ির বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিন পাটোয়ারী ও উনার সহধর্মিনী নিয়ে চিকিৎসা করাতে গিয়ে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরেছে। দেশে ফিরেও অনেক মিস করছি তাদের। সবার জন্য রইলো শুভ কামনা। লেখক: আল-মামুন
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা আইনত দন্ডণীয় অপরাধ।
Leave a Reply