রবিবার, ০৪ Jun ২০২৩, ১২:৩৬ অপরাহ্ন

বান্দরবানের দুই উপজেলার দূর্গম এলাকায় শতাধিক ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত এই পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যু

বান্দরবানের দুই উপজেলার দূর্গম এলাকায় শতাধিক ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত এই পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যু

নুরুল আলম:: পাবর্ত্য জেলার বান্দরবানের দূর্গম এলাকায় শতাধিক ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগি শনাক্ত করা হয়েছে এছাড়াও ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগির সংখ্যাও বাড়ছেদিন দিন। আক্রান্তের ৭ দিনে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে জ্বরে ভুগছে। এরমধ্যে ৯ জন থানচিতে ও ১ জন আলীকদমে। তারা হলেন, থানচির রেমাক্রী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেন থাং পাড়ার আমেন ম্রোর ছেলে মেনথাং ম্রো, নারিচা পাড়ার বাসিন্দা মে তৈ ম্রোর ছেলে লংঞী ম্রো, সিং চং পাড়ার বাসিন্দা মেন রো ম্রোর ছেলে প্রেন ময় ম্রোর, সংওয়ে ম্রো, প্রেণময় ম্রো, ইয়ং নং পাড়ার বাসিন্দা ক্রাইয়ং ম্রো, ক্রায়ক ম্রো, রয়ং ম্রো, নারিচ্যা পাড়ার ক্রেলি ম্রো ও আলীকদমে ১জন।

বৃহষ্পতিবার (১৬ জুন) বান্দরবান সিভিল সার্জন ডা. নীহারঞ্জন নন্দী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, প্রতিবছরই বর্ষার শুরুতে ঝিরি, ঝর্ণা ও নদীর পানিতে আশপাশের ময়লা পানি মিশে যাওয়ায় বান্দরবানের দুর্গম এলাকা গুলোতে সাধারণত ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা যায়। অসচেতনতা ও সুপেয় পানির অভাবে এটা হয়ে থাকে। এবারও থানচি উপজেলার দুর্গম রেমাক্রী ইউনিয়নের কয়েকটি পাড়ায় ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। তিনি বলেন, সর্বশেষ গত ৭ দিনে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থানচিতে ৯ জন ও আলীকদমে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে আনুমানিক শতাধিক রোগি আক্রান্ত হয়েছে। তার মধ্যে কিছু রোগি সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। আক্রান্ত এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে টিম কাজ করছে এবং সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে ওষুধ পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ জানান, রেমাক্রী এলাকায় সুপেয় পানির তীব্র সংকটের কারণে বাধ্য হয়ে স্থানীয়রা অপরিশোধিত পানি পান করছে। যার কারণে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে। ওইসব এলাকায় ওষুধ ও খাবার স্যালাইন পাঠানো হয়েছে। তাদের চিকিৎসায় ১০ জনের একটি মেডিকেল টিম কাজ করছে। এছাড়া ওই এলাকায় একটি ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপনের করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

আলীকদমে সাতদিনে ৫৬ জন ডায়রিয়া রোগী: হাসপাতালের প্রতিবেদন প্রকাশ….
আলীকদম উপজেলার কুরুকপাতা ইউনিয়নে কয়েকদিন ধরে বাড়তে থাকা ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. মো. মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। এতে বলা হয়, গত সাত দিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫৬ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে ৪৬ জন সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নিয়েছেন। ৪ জনকে রেফার করা হয়েছে। ৬ জন বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন। রেফারকৃত রোগীরাও সুস্থ রয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আলীকদম উপজেলায় কয়েকদিন ধরে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা হঠাৎ বৃদ্ধি পায়। বিষয়টি নজরে আসার সাথে সাথে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডায়রিয়া রোগীর চিকিৎসা সুবিধা জোরদার করা হয়। মাঠপর্যায়ে কর্মীদের পাশাপাশি র‌্যাপিড রেসপন্স টিমের সদস্যদের সতর্কাবস্থায় রাখা হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং মাঠপর্যায়ে স্যালাইন, ঔষধ ও পানি বিশুদ্ধকরন টেবলেট সরবরাহ করা হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তা ডা. মো: মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী জানান, মাঠকর্মীরা পাহাড়ের পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে ডায়রিয়া রোগী সনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ঔষধ প্রদান করেন। হাসপাতালে প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাব থাকা সত্ত্বেও দুর্গম এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত পাড়াগুলোর জনপ্রতিনিধি, কারবারী ও স্থানীয় শিক্ষিত যুবকদের মাধ্যমে স্যালাইন, ঔষধ ও পানি বিশুদ্ধকরন টেবলেট সরবরাহ করা হয়।
প্রতিবেদন বলা হয়, সতর্কতার অংশ হিসেবে কুরুকপাতা ইউনিয়নের বিভিন্ন পাহাড়ি পল্লীর বাসিন্দাদের মাঝে গত ৯ দিনে ১ হাজার ১শত ১৫টি স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ১০ হাজার ৪শত টি, মেট্রোনিডাজল ট্যাবলেট ১ হাজার ৬ শত ৮০টি বিতরণ করা হয়। দোছরি বাজার এলাকায় ১শত টি করে প্যারাসিটামল ট্যাবলেট ও জিংক ট্যাবলেট দেয়া হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা আরো বলেন, মেডিকেল টিম গত ৭ দিনে দুর্গম পাড়াগুলোতে ইপিআই টিকা, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রদান, কারবারী ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময় এবং ম্যালেরিয়া টেস্ট করেন। এছাড়াও ৯টি পাড়ার ১ শত ৫৫টি পরিবারের মাঝে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র প্রদান করা হয়।
থানচিতে ম্যালেরিয়া ও ডায়রিয়া নিরসনে মত বিনিময় সভা
পাহাড়ে হঠাৎ ম্যালেরিয়া ও ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখায় রেমাক্রী ইউনিয়নের বড় মদক আন্দারমানিকের ৭টি পাহাড়ি গ্রামে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার পর্যন্ত ৯ জন মারা গেছে। এমন দুর্যোগ পরিস্থিতিতে ডায়রিয়া/ ম্যালেরিয়া প্রাদুর্ভাব হতে স্থায়ী সমাধান নিরসনের স্থানীয় ও সরকারের করণীয় বিষয়ে জরুরি এক মত বিনিময় সভা বান্দরবানে থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

স্বাস্থ্য বিভাগের আয়োজনে মত বিনিময় সভা সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন থোয়াইহ্লামং মারমা। অন্যান্য মধ্যে বান্দরবানে সিভিল সার্জন নিহার রজ্ঞন নন্দী, বান্দরবান জেলা পরিষদে সদস্য ও জেলা স্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটি সভাপতি ক্যসাপ্রু মারমা, ভাইস চেয়ারম্যান চসাথোয়াই মারমা,নারী ভাইস চেয়ারম্যান নুমেপ্রু মারমা প্রমুখ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

 

এই পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা আইনত দন্ডণীয় অপরাধ।

Design & Developed BY Muktodhara Technology Ltd