নুরুল আলম:: উঁচু নীচু নয়নাভিরাম পাহাড় আর প্রকৃতির সবুজে ঘেরা তিন পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান। তিন পার্বত্য জেলাকে বলা হয় নৈসর্গিক সৌন্দর্যের পাহাড় কন্যা লীলাভূমি। এখানে রয়েছে অসংখ্য ছোট বড় ঝিড়ি-ঝর্ণাসহ চোখ জুড়ানো মেঘে মেঘে প্রকৃতি খেলা। শুধু তাই নয় পর্যটকদের আকৃষ্ট করে তুলতে নীলাচল, চিম্বুক, নীলগিরি, দেবতাকুম, আমিয়াকুম ও বড়পাথর, আলোটিলা, তারেং, স্বর্ণ মন্দির, ঝুলন্ত ব্রীজ, সাজেকসহ প্রাণজুড়ানো সব দর্শনীয় স্থান। তাছাড়া মেঘের সাথে মিতালী বেঁধে ছেয়ে গেছে বগালেক, কেউক্রাডং, ডিমপাহাড়, তাহজিডংসহ আরও অসংখ্য পাহাড়। প্রকৃতির এমন সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন ভ্রমণ পিপাসুরা। একইসাথে পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বৈচিত্র্যময় জীবনও কাছে টানে অনেক পর্যটকদের। এমন দৃশ্যমান চিত্র দেখে বিমোহিত হন ভ্রমণ পিপাসুরা। পর্যটনের সৌন্দর্য চিত্র পাশাপাশি পর্যটকদের জনপ্রিয়তা থাকায় দিন দিন বাড়ছে বাঁশ, কাঠ কিংবা ছনের আদলে তৈরি ইকো রিসোর্ট। এসব রিসোর্ট তৈরিতে ফুটে উঠছে পাহাড়িদের ঐতিহ্য মাচাং ঘর আর পরিবেশ বান্ধব হওয়ায় রক্ষা পাচ্ছে প্রকৃতির প্রাণ বৈচিত্র্যময়। সবুজ প্রকৃতির সাথে মিল রেখে পরিবেশ বান্ধব এই রিসোর্টগুলি বেশ চাহিদাও রয়েছে পর্যটকদের কাছে।
দেশের পর্যটন শিল্পে বাড়ছে নতুন ধর্মী পরিবেশ বান্ধব ইকো রিসোর্টের জনপ্রিয়তা। পাহাড়ের ও সাঙ্গু নদীর কোল ঘেঁষে তৈরি হচ্ছে এসব ইকো রিসোর্ট। বাঁশ, কাঠ ও ছনের আদলে তৈরি প্রকৃতির রূপ সাজানো রিসোর্টে চাহিদা অতুলনীয় । এসব রিসোর্ট তৈরিতে ফুটে উঠছে পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহী মাচাং ঘর। প্রকৃতির সাথে মিলিয়ে গড়ে উঠা এসব রিসোর্টে ফুটে উঠে স্থানীয় ঐতিহ্য আর নির্মাণ কারুকাজ। রিসোর্টের পাশে কোথাও কোল ঘেঁষে বয়ে যাওয়া সাঙ্গু নদী আর কোথাও দিগন্ত বিস্তৃত লেকের সৌন্দর্য মুগ্ধ করে পর্যটকদের। পাহাড়ের এসব ইকো রিসোর্টের নিরিবিলি পরিবেশে হারিয়ে যান ভ্রমণপিপাসুরা। পর্যটকদের কাছে যেমন জনপ্রিয়তা বাড়ছে তেমনি পরিবেশ বান্ধব হওয়ায় রক্ষা পাচ্ছে প্রাণ বৈচিত্র্যময়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রায় শতাধিক পরিবেশ বান্ধব ইকো রিসোর্ট রয়েছে তিন পার্বত্য জেলায়। তং রিসোর্ট, লাবাতং, ইকো রিসোর্ট, ফানুস, মিরিঞ্জা ভ্যালি, গ্রীন পিকসহ অসংখ্য গড়ে তুলেছে পর্যটন ব্যবসায়ীরা। অধিকাংশ ঘরে ডিজাইন পুরোপুরি মাচাং ঘরের মতন। ঘরের চারিদিকে বাশের বেড়া, ছন ও কাঠ দিয়ে তৈরি করা বারান্দা। আবার কোথাও কোথাও ব্যবহৃত খাবার প্লেট কিংবা গ্লাসেসও বাশের তৈরি। ঘরের চারিপাশে প্রকৃতি সবুজের সমারোহসহ সাঙ্গু পানিতে ছুটে চলা ইঞ্জিন চালিত নৌকা। এসব প্রকৃতিকে উপভোগ করতে দালান কোটা ছেড়ে এসব ইকো রিসোর্টের ছুটে আসেন ভ্রমণ পিপাসুরা। আধুনিক মানের হোটেল মোটেল বাদ দিয়ে ক্লান্তি ভুলতে প্রকৃতির কোলো গড়ে উঠা এসব রিসোর্টকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন পর্যটকরা।
পর্যটকরা জানিয়েছেন, সমতলে যান্ত্রিক শহর ছেড়ে পাহাড়ের ঘুরাফেরা করতে পছন্দ করেন পর্যটকরা। আধুনিক মানের হোটেলের চাইতে প্রকৃতির সান্নিধ্যে গড়ে উঠা এসব রিসোর্ট ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয় নিমিষেই। পাওয়া যায় প্রকৃতির সাথে মিশে যাওয়ার এক ভিন্ন আমেজ। তাই ঘুরতে গেলে পছন্দের প্রথমেই এসব রিসোর্ট বেছে নিচ্ছেন ভ্রমণ পিপাসূরা।
অন্যদিকে পর্যটনের ব্যবসায়ীরা বলছেন- পর্যটন এলাকাগুলোতে দিনে দিনে ইকো রিসোর্টের চাহিদা বাড়ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এসব ইকো রিসোর্টের চাহিদা এতোটাই বেড়েছে যে মৌসুমে বা ছুটির দিনে অনেকেই রুম পান না। তাই সরকারি বেসরকারি সংস্থাগুলো চাইলে এ খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে পারে। এতে করে দেশের পর্যটন এলাকায় যেমন দিন দিন বাড়ছে পরিবেশ বান্ধব ইকো রিসোর্টের জনপ্রিয়তা তেমনি বাড়ছে পর্যটন খাতে ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ।
ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটকরা বলেন, শহরের যান্ত্রিক আওয়াজের মধ্যে ব্যস্ততায় পার করি। আনন্দের মুহূর্ত পর্যন্ত সময় খুঁজে পাই না। এখন সুযোগ কাজে লাগিয়ে পাহাড়ের ঘুরতে আসছি। সবচেয়ে আনন্দঘন পরিবেশে কাজ করে সেটি হল পাহাড়ের উপর তৈরি ইকো রিসোর্ট।
তং রিসোর্টে স্বত্বাধিকারী বলেন, সাঙ্গু নদী ঘেঁষে পাহাড়ের উপর সম্পূর্ণভাবে ইকো রিসোর্ট তৈরি করা হয়েছে। বাঁশ, কাঠ ও ছনের আদলে পাহাড়িদের মাচাং ঘর মতন ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। যেটি সম্পূর্ণ পরিবেশ বান্ধব। তাছাড়া পর্যটকদের কাছে এসব রিসোর্টে জনপ্রিয়তা বেশী রয়েছে।
বান্দরবানে হোটেল মালিক বলেন, বর্তমানে দেশের পর্যটন এলাকাগুলোতে হোটেল মোটেলের বিপরীতে ইক্ োরিসোর্ট প্রায় ২০ শতাংশ । যার ফলে দেশীয় পর্যটকসহ বিদেশি পর্যটকদের কাছেও একমাত্র পছন্দ এই ইকো রিসোর্ট। বাঁশ,কাঠ ও ছন দিয়ে তৈরি করা পরিবেশ বান্ধব এসব ঘরগুলো যেমনি চাহিদা বাড়ছে তেমনি পরিবেশ বিপর্যস্ত থেকে রেহাই পাচ্ছে। তাই পর্যটন শিল্পের পরিবেশ বান্ধব এসব ইকো রিসোর্ট বাড়ানো প্রয়োজন।
Leave a Reply