শিরোনাম
খাগড়াছড়ির বাজারে পাহাড়ি-বাঙালির উপস্থিতি স্বাভাবিক খাগড়াছড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট;আ.লী-যুবলীগের ৫ নেতাকর্মী গ্রেফতার পাহাড়ে শান্তি-শৃঙ্খলায বজায় রাখতে প্রস্তুত সেনাবাহিনী গুইমারায় বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ও পরিচালনা কমিটির সাথে মতবিনিময় গুইমারায় জাতীয় জন্ম ও মৃতু দিবস উপলক্ষ্যে র‌্যালি ও আলোচনা সভা খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় পূজা মন্ডপের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ৩ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন বিভিন্ন পুজা মন্ডপ ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন একটি মহল পার্বত্য চট্টগ্রামকে অশান্ত করার ষড়যন্ত্র করছে গুইমারায় বিএনপির অফিস ভাংচুরের দায়ে এক ব্যক্তি আটক গুইমারায় বাজার বয়কটের প্রেক্ষাপটে মতবিনিময় সভা

পার্বত্যাঞ্চলে শান্তি ও উন্নয়নে সেনাবাহিনী বদ্ধপরিকর

Reporter Name

নুরুল আলম:: রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান নিয়ে গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকাটি বাংলাদেশের অন্য ৬১টি জেলার চেয়ে ভিন্ন প্রকৃতির। ‘শান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নয়ন’ মূলমন্ত্রকে সামনে রেখে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকাগুলোতে সরকারের পাশাপাশি কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেনা সদস্যবৃন্দ নিরীহ পার্বত্য জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা রক্ষায় তৎপর রয়েছে।

দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী বুকের রক্ত দিয়ে হলেও দেশের স্বাধীনতা ও ভূখন্ডের অখন্ডতা রক্ষা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামেশান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখার জন্য বদ্ধপরিকর। শান্তি চুক্তির পরবর্তী সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থিতিশীলতা, শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত জনসাধারণের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে নিয়মিতভাবে উন্নয়নমূলক প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন উন্নয়নমুখী কার্যক্রম, খাদ্য সমস্যা নিরসন, বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের চিকিৎসাসেবা, দরিদ্র ব্যক্তিদের স্বাবলম্বী হতে সহযোগিতা, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, দুর্গম এলাকায় পানির কষ্ট লাঘবে সুপেয় পানির ব্যবস্থা এবং বেকার ব্যক্তিবর্গের কর্মসংস্থানের জন্য ক্ষুদ্র কারখানা স্থাপন করে আসছে।

পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে রচিত। তবে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে পাহাড়ি-বাঙালি সম্পর্ককে অত্যন্ত নেতিবাচকভাবে বিভিন্ন মহলে উত্থাপন করার অপপ্রয়াস চালায়। সেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সময়ের আবর্তে নানাবিধ কারণে অনেকটা বিনষ্ট হয়েছে।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বৃদ্ধিতে সেনাবাহিনী নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করছে, যা পাহাড়ি-বাঙালিদের সম্পর্ক উন্নয়নে প্রভূত সফলতা বয়ে নিয়ে এসেছে। যেমন- জাতীয় সকল দিবসে সেনাবাহিনী এবং জেলা-উপজেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে পাহাড়ি-বাঙালিদের মিলনমেলার আয়োজন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সকল ধর্মীয় অনুষ্ঠান নিরাপত্তার সঙ্গে পালনে সহায়তা, সেনাবাহিনী কর্মকর্তাদের উপস্থিতি এবং সেনাবাহিনী কর্তৃক আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পাহাড়ি-বাঙালিদের আমন্ত্রণ, যা সার্বিকভাবে পাহাড়ি-বাঙালি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি গঠনে ভূমিকা রাখে।

পাহাড়ি-বাঙালিদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে পাড়া, মৌজা, ইউনিয়ন, উপজেলা এবং সবশেষে জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন, জনগোষ্ঠীর স্বকীয়তা ধারণ ও চর্চার উদ্দেশ্যে পাহাড়ি-বাঙালিদের সম্পৃক্ততায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। দুর্গম পার্বত্য এলাকার জনগণের সুষ্ঠু বিনোদনের জন্য সেনাবাহিনী কর্তৃক বিগত বছরে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনের পাশাপাশি উন্মুক্ত চলচ্চিত্রও প্রদর্শন করা হয়।

সেনাবাহিনীর সার্বিক অর্থায়নে সংগীত বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পাহাড়ি-বাঙালি ছেলেমেয়েদের সুকোমল মনোবৃত্তির চর্চায় আগ্রহী করে তোলায় সেনাবাহিনী কার্যকর ভূমিকা রেখে চলেছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে স্কুলের স্বল্পতা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার অসুবিধার কারণেও অনেকেই শিক্ষা গ্রহণ কার্যক্রমের বাইরে থেকে যায়। সার্বিক পরিস্থিতি হতে উত্তরণের মাধ্যম হিসেবে সেনাবাহিনীর সার্বিক ব্যবস্থাপনা এবং অর্থায়নে সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামজুড়েই অনেক ইংরেজি ও বাংলা মাধ্যমের স্কুল (দিবা ও নৈশ) পরিচালনা করে থাকে।

সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো থেকে শুরু করে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা, বই বিতরণ, শিক্ষাসামগ্রী প্রদান, ছাত্র-ছাত্রী পরিবহন, আর্থিক অনুদান, কম্পিউটারসহ বিভিন্ন শিক্ষাসামগ্রী, ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুল ড্রেস ও খেলাধুলার সামগ্রী বিতরণ করে সর্বদা স্থানীয় পাহাড়ি-বাঙালিদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। সেনাবাহিনী প্রতিবছরই শিক্ষাকে সর্বাগ্রে নিয়ে আসা, সর্বস্তরের প্রতিনিধিদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিসহ মানসম্মত ও কর্মঠ শিক্ষকের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরার জন্য শিক্ষা সেমিনারের আয়োজন করে।

এছাড়াও ছাত্র-ছাত্রীদের মেধার বিকাশ ও জ্ঞানের নানামুখী চর্চায় সুযোগ্য মানুষ হয়ে গড়ে ওঠার জন্য আন্তঃস্কুল বিতর্ক, বানান ও কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে সেনাবাহিনী। সেনা রিজিয়ন/জোন কর্তৃক পরিচালিত কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পাহাড়ি-বাঙালি প্রশিক্ষণার্থী কম্পিউটার প্রশিক্ষণে দক্ষতা অর্জন করেছে, যা তাদের কর্মসংস্থান বা চাকরি পেতে সহায়তা করছে।

সর্বোপরি, পিছিয়ে পড়া জনপদের মানব উন্নয়ন প্রক্রিয়া সমুন্নত করা এবং সকলের নিকট সর্বোচ্চ সুবিধা পৌঁছে দেওয়াও সেনাবাহিনী কর্তৃক সম্পাদিত কার্যসমূহের অন্তর্নিহিত লক্ষ্য।

পার্বত্য দুর্গম এলাকাগুলোতে চিকিৎসার অভাবে দিনাতিপাত করা মানুষের পাশে সব সময়ই দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনী কর্তৃক প্রতিবছর নিয়মিতভাবে পার্বত্য তিন জেলায় বিনামূল্যে চক্ষুশিবির পরিচালনা করে পার্বত্য এলাকার সুবিধাবঞ্চিত বয়োবৃদ্ধ পাহাড়ি ও বাঙালির চোখের ছানি অপারেশনসহ বিভিন্ন ধরনের চক্ষুসেবা প্রদান করা হয়।

সম্প্রতি গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রাইসুল ইসলাম এসপিপি, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, এমফিল সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় বলেন, গুইমারা রিজিয়ন সেনাবাহিনীর চিকিৎসকের মাধ্যমে দুর্গম এলাকায় বসবাসকারী পীড়িত উপজাতি ও বাঙালিদের বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়। জন্মকালীন মৃত্যুরোধে সেনাবাহিনী কর্তৃক ধাত্রী প্রশিক্ষণ প্রদানের আয়োজন পার্বত্য তিন জেলায় মা ও শিশু মৃত্যুর হার অনেক কমিয়ে দিয়েছে, যা ‘মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল’ অর্জনে বিশেষভাবে সহায়ক হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জনকল্যাণ মূলক কর্মকান্ড যেমন, অসহায়দের মাঝে আর্থিক সহযোগিতা, ঘর মেরামতের জন্য ঢেউ টিল, আত্মসাবলম্বিন হওয়ার জন্য মহিলাদের সেলাই মেশিন প্রদান, সোলার প্যানেল বিতরণ, ধর্মী প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন সহায়তা প্রদান ও বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ডে ভূমিকা রাখছে গুইমারা রিজিয়ন।

করোনায় যখন সারাদেশের মানুষ নিজের জীবন বাঁচাতে ব্যস্ত ঠিক তখনই খাগড়াছড়ি, বান্দরবান এবং রাঙ্গামাটির দুর্গম অঞ্চলের মানুষকে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া, বিভিন্ন প্রকার চিকিৎসাসেবা প্রদান এবং জনস্বার্থমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে সেনাবাহিনী। পার্বত্য চট্টগ্রামে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের চিকিৎসাসেবায় সেনাবাহিনীর এই সহায়তা সব সময় চলমান রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও চলমান থাকবে।

সরকারের নির্দেশনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পাহাড়ের অন্ধকারাচ্ছন্ন মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে হাতে নিয়েছে নানা পরিকল্পনা। সেনাবাহিনীর সদস্যরা পার্বত্যাঞ্চলে দিনরাত পরিশ্রম করে রাতারাতি সেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিশাল পরিবর্তন ঘটিয়েছে। সেনাবাহিনী এ পর্যন্ত সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৫৩২ কিমি নতুন রাস্তা তৈরি, ভূমিধস বা অত্যধিক বৃষ্টিতে ভেঙে পড়া রাস্তা মেরামত, যাতায়াতের সুবিধার্থে ছোট ছোট নদী ও খালের ওপর সেতু ও সাঁকো তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা রেখে চলেছে।

বাংলাদেশের সর্বাধিক উচ্চতাবিশিষ্ট থানচি-আলীকদম সড়ক, বাঙ্গালহালিয়া-রাজস্থলী সড়ক, বাঘাইহাট-সাজেক সড়ক, বান্দরবান-বাঙ্গালহালিয়া-চন্দ্রঘোনা-ঘাগড়া সড়ক প্রকল্পটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্মাণ করা হয়েছে। রাজস্থলী-ফারুয়া-বিলাইছড়ি-জুরাছড়ি-বরকল সড়কটিও সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্মাণের প্রক্রিয়াধীন আছে। তিন পার্বত্য জেলার অরক্ষিত সীমান্ত এলাকাকে নজরদারির আওতায় আনা ও অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল ও উপজাতি সন্ত্রাসীদের প্রতিকূল অবস্থান মোকাবিলা করে ১০৩৬ কিমি দীর্ঘ সীমান্ত সড়ক (খাগড়াছড়ির রামগড়ের ফেনী নদীর কূল হতে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ির সাজেক, বরকল, বিলাইছড়ি হয়ে বান্দরবানের রুমা, থানচি, আলীকদম, নাইক্ষংছড়ির ঘুমধুম, টেকনাফ) নির্মাণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিবেদিতপ্রাণ হয়ে দায়িত্ব পালন করছে।

 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ
© 2019, All rights reserved.
Developed by Raytahost
error: Content is protected !!