পার্বত্যাঞ্চলে নির্মিত হচ্ছে দেশের একমাত্র সীমান্ত সড়ক

Reporter Name

নুরুল আলম:: রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলার সীমান্তে পাহাড়ের চূড়ায় নির্মিত হচ্ছে দেশের একমাত্র সীমান্ত সড়ক। কয়েকটি পর্যায়ে সম্পন্ন করা হবে এক হাজার ৩৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সড়কটি। প্রথম পর্যায়ের ৩১৭ কিলোমিটার কাজ শেষ হতে আর কিছু সময় বাকি। ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে সড়কটি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে তিন হাজার ফুট উপরে। দুর্গম পাহাড়, কঠিন যাতায়াতব্যবস্থা। নেই কোনো পানি ও খাবারের ব্যবস্থা। নেই মোবাইলফোনের নেটওয়ার্ক। বর্ষাকালে পাহাড়ি এ জনপদ হয়ে ওঠে আরো বিভীষিকাময়। এমন বাস্তবতা মেনেই শ্রমিকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে পার্বত্য চট্টগ্রামের সীমান্তে নির্মিত হচ্ছে এক হাজার ৩৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সীমান্তসড়ক।

পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়নের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহেই সীমান্তসড়ক নির্মাণ প্রকল্প নেয়া হয়। প্রকল্পটি গুণগতমান নিশ্চিত ও যথাসময়ে সম্পন্ন করতে বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে। সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন ব্রিগেডের ১৬, ২০ ও ২৬ ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন ব্যাটালিয়ন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। এক হাজার ৩৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সীমান্ত সড়ক প্রকল্পটি কয়েকটি পর্যায়ে সম্পন্ন করা হবে। এর মধ্যে একনেকে অনুমোদিত প্রথম পর্যায়ে ৩১৭ কিলোমিটার প্রকল্পের মধ্যে ৯৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। আরো ১৩২ কিলোমিটার চলমান নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে চলতি বছরের এপ্রিলে। অবশিষ্ট আরো ৯০ কিলোমিটার কাজ সম্পন্ন হবে ২০২৪ এর জুনে।

সীমান্ত সড়ক নির্মিত হওয়ায় ভবিষ্যতে আশার আলো দেখছেন দুর্গম পাহাড়ের স্থানীয় মানুষেরা। তাদের আশা এ সড়কের মাধ্যমে তাদের জীবন বদলে যাবে। তাদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতি হবে। ব্যবসা ও বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে ও পাহাড়ের কৃষিজাত পণ্য, ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।

রাজস্থলী উপজেলার মিতিঙ্গাছড়ি এলাকার বাসিন্দা ও ঘিলাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা সদস্য বলেন, সীমান্তসড়ক হওয়ার আগে কেউ অসুস্থ হলে রোগীকে এখান থেকে হাসপাতালে নিতে খুবই কষ্ট করতে হতো। বর্তমানে আমরা দুই ঘণ্টার মধ্যে রাজস্থলী সদর হাসপাতালে রোগীদের নিয়ে যেতে পারি।

ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের মিতিঙ্গাছড়ি গ্রামের এক প্রতিনিধি বলেন, আমাদের এ মিতিঙ্গাছড়ি থেকে রাজস্থলী সদরের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। সীমান্তসড়ক হওয়ার ফলে সেই দূরত্বে আমাদের অনেকাংশে কমে গেছে। এখন দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা রাজস্থলী সদর থেকে শুরু করে চন্দ্রঘোনা লিচু বাগান ও চট্টগ্রাম এমনকি রাজধানীতে পৌঁছে যেতে পারি।

রাজস্থলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন, সীমান্ত সড়ক হওয়ার কারণে দুর্গম এলাকার জনগণ বর্তমানে প্রত্যন্ত এলাকা থেকে কৃষিপণ্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন জিনিসপত্র রাজস্থলী সদরে এনে বিক্রি করতে পারছে। শুধু রাজস্থলী উপজেলা নয় জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি উপজেলার মানুষও এ সড়কের ফলে উপকৃত হবে। ভবিষ্যতে এই সড়ক পর্যটনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সীমান্ত সড়কনির্মাণের ফলে স্থানীয়রা যেমন আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেছেন তেমনি বর্তমান সরকারের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন তারা।

২৬ ইঞ্জিনিয়ার্স কন্সট্রাকশন ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিরলস প্রচেষ্টায় সীমান্ত সড়ক প্রকল্পটি গুণগত মান নিশ্চিত করে সম্পন্ন করা হচ্ছে। সেনাবাহিনী প্রধানের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী ২০২৪ সালের মাঝামাঝি প্রকল্পটি শেষ করা হবে।

সম্প্রতি সেনাবাহিনী প্রধান প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ এবং এ প্রকল্পে নিয়োজিত সেনাসদস্যদের মনোবল উন্নত করার জন্য প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন। তিনি সর্বশেষ রাঙ্গামাটির রাজস্থলী হয়ে জুরাছড়ির দুমদুম্যা সুইচাল এলাকায় সীমান্ত সড়কের নির্মাণকাজ পরিদর্শন করেন। এ সময় সেনাসদর এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের ঊর্ধ্বতন সেনাকর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সীমান্ত সড়ককে ঘিরে মানুষ এখন নতুনভাবে স্বপ্ন বুনছেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, তথ্যপ্রযুক্তির, পর্যটন শিল্পের প্রসার এবং জীবনমানের ব্যাপক পরিবর্তনে সীমান্ত সড়ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেই স্থানীয় বাসিন্দাদের আশা।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শত প্রতিকূলতাকে জয় করে অবিশ্বাস্য ইতিহাস সৃষ্টি করে চলেছে। ‘সীমান্ত সড়ক প্রকল্পর নির্মাণকাজ শেষ হলে পার্বত্য জেলাগুলোর সীমান্তে নিরাপত্তাসহ পর্যটনব্যবস্থার উন্নতি এবং পার্বত্য জেলার দুর্গম সীমান্ত এলাকায় যোগাযোগব্যবস্থার সৃষ্টি হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ
© 2019, All rights reserved.
Developed by Raytahost
error: Content is protected !!