মাহরুফ চৌধুরী:: বাংলাদেশে বিভিন্ন দাবি আদায়ের নামে রাস্তা অবরোধ, কর্মবিরতি, ভাঙচুর ও সহিংস আন্দোলন সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে চরমভাবে ব্যাহত করছে। প্রতিদিন কর্মস্থলগামী মানুষ, শিক্ষার্থী, রোগীসহ নিম্ন আয়ের মানুষরা এই পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন। আন্দোলনের নামে জনজীবনকে স্থবির করে দেওয়া কোনোভাবেই সমাধান হতে পারে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, গণতান্ত্রিক দেশে দাবি আদায়ের অধিকার যেমন স্বীকৃত, তেমনি সাধারণ জনগণের চলাচলের স্বাধীনতাও রক্ষা করা জরুরি। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো দাবি আদায়ের জন্য কিছু গোষ্ঠী আন্দোলনের নামে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে, যা সাধারণ মানুষের কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অনেক সময় জীবন-মরণ সমস্যায় থাকা রোগী সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছাতে না পেরে মৃত্যুবরণ করেন। পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে পারেন না, শ্রমজীবী মানুষ কাজের জায়গায় পৌঁছাতে না পারায় দিন শেষে পরিবারের জন্য অন্ন সংস্থানের সুযোগ হারান। এতে দেশের অর্থনীতি ও সামগ্রিক অগ্রগতিও বাধাগ্রস্ত হয়।
ড. মাহরুফ চৌধুরী, যিনি একজন সমাজতাত্ত্বিক গবেষক, মনে করেন, শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক উপায়ে দাবি আদায়ের জন্য কিছু কাঠামোগত সংস্কার জরুরি। তার মতে, এর সমাধান হতে পারে—
একটি গণতান্ত্রিক দেশে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। তবে এর মাধ্যমে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই সমাজের সব স্তরের মানুষের উচিত বিকল্প উপায়ে দাবি আদায়ের উপায় খুঁজে বের করা। সরকার, আন্দোলনকারীরা ও সাধারণ জনগণ মিলিতভাবে এমন একটি পথ বেছে নিলে দেশের অগ্রগতি ও জনজীবনের নিরাপত্তা একসঙ্গে নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
শিক্ষার ভবিষ্যৎ: চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
বর্তমান বিশ্ব দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে, এবং শিক্ষাক্ষেত্রও এর ব্যতিক্রম নয়। প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে শিক্ষাব্যবস্থা নতুন চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনার সম্মুখীন হয়েছে। এই পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হলে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর করতে হবে।
প্রথমত, ডিজিটাল শিক্ষার প্রসার শিক্ষাক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। অনলাইন ক্লাস, ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম এবং ভার্চুয়াল রিয়ালিটি এখন শিক্ষার অঙ্গ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। তবে, ডিজিটাল ডিভাইসের সহজলভ্যতা ও ইন্টারনেট সংযোগের অভাব অনেক শিক্ষার্থীকে পিছিয়ে দিচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, শিক্ষার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত দক্ষতা ও দুর্বলতা বিশ্লেষণ করে উপযুক্ত শিক্ষণ পদ্ধতি নির্ধারণ করা সম্ভব হবে। তবে, এই প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে নীতি নির্ধারকদের বিশেষ ভূমিকা পালন করতে হবে।
তৃতীয়ত, কর্মসংস্থানের চাহিদার সাথে শিক্ষার সংযোগ বাড়াতে হবে। আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় সফট স্কিল, বিশ্লেষণাত্মক চিন্তাভাবনা এবং সৃজনশীলতার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা বাস্তব জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়।
শিক্ষার ভবিষ্যৎ গঠনে সরকার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং প্রযুক্তিবিদদের একসাথে কাজ করতে হবে। নীতি নির্ধারণে দূরদৃষ্টি ও প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। তবেই আমরা একটি উন্নত ও টেকসই শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারবো।
লিখেছেন: ড. মাহরুফ চৌধুরী, ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি, ইউনিভার্সিটি অব রোহ্যাম্পটন, যুক্তরাজ্য।
Leave a Reply